সমাস ও তার শ্রেণিবিভাগ




 সমাস কাকে বলে ?

 ✍️দুই বা তার অধিক পরস্পর অর্থ সম্বন্ধযুক্ত পদ মিলিত হয়ে এ পদে পরিণত হওয়াকে সমাস বলে।

উদা: মা ও বাবা =মা-বাবা 

এখানেই 'মা' একটি পদ ও 'বাবা' আরেকটি পদ। এই দুটি পদ একত্রে মিলিত হয়ে 'মা-বাবা' একটি পদে পরিণত হয়েছে।


সমাস শব্দের অর্থ কী ?

✍️সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল সংক্ষেপ বা এক হ‌ওয়া 

সমাস শব্দের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ


সমাস শব্দের বিশ্লেষণ

✍️সমাস শব্দটিকে 'প্রকৃতি - প্রত্যয়' , সন্ধি ও সমাসের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করলে হয়

১। প্রকৃতি-প্রত্যয় :- সম-✓অস+ অ(ঘঞ)

২। সন্ধি :- সম+ আস (সম-এক, আস - হ‌ওয়া)


সন্ধি ও সমাসের সাদৃশ্য

১। সন্ধি ও সমাস উভয়েরই কাজ হল বাক্য সৌন্দর্যায়ণের জন্য পদকে ছোট করা। সন্ধিতে দুটি বা তার অধিক পদ যেমন মিলিত হয়, ঠিক তেমনি সমাসে দুই বা তার অধিক পদ মিলিত হয় । এই মিলন মূলত বাক সীমিত ও বাক্যে সৌন্দর্যায়নের জন্যই করা হয় । এই মিল ছাড়া সন্ধি ও সমাসের আর অন্য কোনো মিল বা সাদৃশ্য দেখা যায় না।


সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য বা বৈশাদৃশ্য

সন্ধি ও সমাসের সাদৃশ্যের তুলনায় বৈসাদৃশ্যের পরিমাণ বেশি। 

১। সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন হয় কিন্তু সমাসে পদের সঙ্গে পদের মিলন হয়।

যেমন :- হিম+ আলয় = হিমালয় 

এখানে 'হিম' পদের অন্ত্য বর্ণ 'অ' এর সঙ্গে 'আলয়" পদের অন্ত্য বর্ণ 'আ' যুক্ত হয়ে হয়েছে 'আ'  (অ+আ=আ )।


২। সন্ধিতে প্রত্যেকটি পদের অর্থ বজায় থাকে কিন্তু সমাসে একমাত্র দ্বন্দ্ব সমাসে উভয় পদের অর্থ বজায় থাকে, বাকি অন্য কোনো সমাসে উভয় পদের অর্থ বজায় থাকে না। দ্বন্দ্ব সমাস বাদে বাকি সমাস গুলিতে কখনো পূর্বপদের অর্থ বজায় থাকে, কখনো পরপদের অর্থ বজায় থাকে, কখনো পূর্বপদ ও পরপদ কোন পদের অর্থ বজায় না থেকে অন্য কোনো পদের অর্থ বজায় থাকে।

উদা :- হিম + আলয় = হিমালয় 

এখানে হিম শব্দের অর্থ বরফ এবং আলোই শব্দের অর্থ হল অর্থাৎ হিমালয় শব্দের অর্থ হল বরফের ঘর।

অন্যদিকে সমাসে "মা ও বাবা= মা-বাবা" এটি দ্বন্দ্ব সমাস ।এখানে 'মা' এবং 'বাবা' উভয় পদের অর্থ বজায় আছে। কিন্তু "গাছে পাকা= গাছপাকা" , "দশটি আনন যাহার= দশানন" । এখানে প্রথম উদাহরণে পরপদের অর্থ এবং শেষের উদাহরণে কোন পদের অর্থ বজায় না থেকে অন্য একটি ফদের অর্থ প্রদান করেছে।


৩। সন্ধিতে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় না সমাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায়।

৪। সন্ধিতে পদগুলির ক্রম অক্ষুন্ন থাকে কিন্তু সমাসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদের ক্রম অক্ষুন্ন থাকে না।

 যেমন - পূর্বোক্ত উদাহরণে হিম ও আলয় এই দুটি পদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি কিন্তু "সেদ্ধ যে আলু= আলু সেদ্ধ"। এখানে পদগুলির ক্রম অক্ষুন্ন থাকেনি ,সে গুলি নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তন করেছে।


সমাসের কয়েকটি পরিভাষা :-

✍️সমাস শিখতে গেলে চারটি পরিভাষার প্রয়োজন হয় । পরিভাষা গুলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে কখনোই সমাজ শিখতে পারা যায় না। ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারলে সমাস আর কোন জটিল বিষয় মনে হবে না।তাই পরিভাষা গুলি নিচে সংজ্ঞা ও উদাহরণ সহকারে উপস্থাপন করা হল:-

১। সমস্ত পদ:-

  ✍️সমাসে একাধিক পদ মিলিত হয়ে যে নতুন একটি পদ গঠন করে, সেই নতুন পদটিকে 'সমস্ত পদ' বা 'সমাসবদ্ধ' পদ বলে।


উদা:- উপরোক্ত উদাহরণের 'মাবাবা' ও 'দশানন' হল সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ ।


 * সমস্ত পদটি একটি মাত্র পদ । এটিকে এক মাত্রায় লেখা হয়। পদটি অনেক বড়ো হলে তা হাইফেন দিয়ে তা যুক্ত করা হয়।


 যেমন - "যক্ষ-দানব-মানব " এইভাবে সমস্ত পদ গঠন করা হয় ।


২। সমস্যমান পদ :-

    ✍️যে সমস্ত পদের সমন্বয়ে সমাসবদ্ধ পদের সৃষ্টি হয়, তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলে।


 উদা:- উপরোক্ত উদাহরণের 'মা' একটি সমস্যমান পদ ও 'বাবা' একটি সমস্যমান পদ ।


৩। ব্যাসবাক্য :-

    ✍️যে বাক্য বা বাক্যাংশ দ্বারা সমাসবদ্ধ পদকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়, তাকে ব্যাসবাক্য বলে।


 ব্যাস শব্দের অর্থ:- বিস্তার ।


মনে রাখবে ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদ গুলি বিচ্ছিন্নভাবে থাকে কিন্তু সমাসে সেগুলি অবিচ্ছিন্নভাবে থাকে।


উদা :- উপরোক্ত উদাহরণে 'মা ও বাবা' এবং ' অস্ত্র দ্বারা আহত' হল দুটি ব্যাসবাক্য ।


৪। পূর্ব পদ ও পরপদ :-

   ✍️সমস্যমান পদের আগের পদটিকে বলে পূর্বপদ এবং পরের পদটিকে বলে পরপদ বা উত্তরপদ।


উদা:-  পীত যে অম্বর =পীতাম্বর


    এখানে 'পীত' হল পূর্বপদ ও 'অম্বর' হল পরপদ ।


* ব্যাসবাক্যে পূর্বপদ ও পরপদ ছাড়াও 'সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ'  থাকতে দেখা যায় ।


 সমাসের শ্রেণিবিন্যাস

✍️সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী সমাস চার প্রকার 

১। দ্বন্দ্ব সমাস

 ২। তৎপুরুষ সমাস 

৩। বহুব্রীহি সমাস 

৪। অব্যয়ীভাব সমাস 


ড: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে শ্রেণীবিভাগ

ক) সংযোগমূলক সমাস- দ্বন্দ্ব সমাস

খ) ব্যাখ্যামূলক সমাস- তৎপুরুষ,কর্মধারয়, দ্বিগু সমাস।

গ) বর্ণনামূলক সমাস - বহুব্রীহি সমাস ।


৩। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পদের অর্থের দিক থেকে সমাসকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয় 

ক) পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য - অব্যয়ীভাব সমাস

খ) পরপদের অর্থ প্রাধান্য - তৎপুরুষ, কর্মধারয়,দ্বিগু সমাস

গ) উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য :- দ্বন্দ্ব সমাস

ঘ) অন্য পদের অর্থ প্রাধান্য :- বহুব্রীহি সমাস সমাস।

৪। বাংলায় আমরা আমাদের সুবিধার্থে সমাসকে মূল ৬টি ও ব্যতিক্রম ৩টি শ্রেণীতে ভাগ করে ,মোট নয়টি শ্রেণী বিভাগে বিন্যস্ত করে আলোচনা করা হয়।

ক)দ্বন্দ্ব সমাস

খ) তৎপুরুষ সমাস

গ)কর্মধারয় সমাস

ঘ) দ্বিগু সমাস

ঙ) বহুব্রীহি সমাস

চ) অব্যয়ীভাব সমাস

ছ) অলোপ/ অলুক সমাস

জ) নিত্য সমাস

ঝ) বাক্যাশ্রয়ী সমাস






 


Post a Comment

0 Comments