ধ্বনির সংজ্ঞা:- |
মানুষের বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থপূর্ণ আওয়াজকে বলে ধ্বনি ।
ধ্বনি দুই প্রকার
১। বিভাজ্য ধ্বনি
২। অবিভাজ্য ধ্বনি।
১। 👉বিভাজ্য ধ্বনি:-
যে ধ্বনি গুলিকে বিশ্লেষণ করলে কতকগুলি পৃথক পৃথক এককে ভাগ করা যায় , তাদের বিভাজ্য ধ্বনি বলে।
এই বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করলে হবে
র্+আ+ম্ য্+আ+য়্ ? অর্থাৎ বাক্যটি কতকগুলি ছোটো ছোটো ধ্বনিগত উপাদান নিয়ে গঠিত হয়েছে।
বিভাজ্য ধ্বনির প্রকারভেদ
বিভাজ্য ধ্বনি দুই প্রকার -
(১) স্বরধ্বনি
(২) ব্যঞ্জনধ্বনি
✍️ স্বরধ্বনি :-
মান্য বাংলার স্বরধ্বনি সংখ্যা ৭ টি ।
বাংলা স্বরধ্বনি গুলির স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে
(I) জিহ্বার অবস্থান।
(II) ওষ্ঠের আকৃতি ।
(III) মুখবিবরের শূণ্যতার পরিমাণ।
অর্থাৎ স্বরধ্বনির শ্রেণীবিন্যাসের মানদণ্ডও তিনটি।
(I) ✍️ জিহ্বার অবস্থান অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ:-
👉 স্বরধ্বনি উচ্চারণের জিহ্বার দু-ধরনের গতি দেখা যায়।
(অ) ✍️ জিহ্বার অগ্র- পশ্চাৎ গতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ:-
জিহ্বার অগ্র-পশ্চাৎ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) সম্মুখ স্বর :-
যে ধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনের দিকে এগিয়ে যায়, সেই ধ্বনিগুলিকে সম্মুখ স্বর বলে।
উদা:- 'ই' , 'এ' , 'অ্যা'
(খ) পশ্চাৎ স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণ করার সময় জ্বিহবা পিছনের দিকে সরে যায়, সেই ধ্বনি গুলিকে প্রশ্চাৎ স্বর বলে।
উদা:- 'উ', 'ও' , 'অ' ।
(গ) কেন্দ্রীয় স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা অগ্র-পশ্চাৎ স্বরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে ,সেই স্বরধ্বনি গুলিকে কেন্দ্রীয় স্বর বলে।
উদা:- 'আ'
(আ) ✍️ জিহ্বার উচ্চ-নীচ গতি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ:-
জিহ্বার উচ্চ-নীচ গতি অনুযায়ী স্বরধ্বনি গুলিকে ৪ ভাগে ভাগ করা হয় ।
(ক) উচ্চ স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা স্বরধ্বনি এলাকার সর্বোচ্চে অবস্থান করে, তাদের উচ্চস্বর বলে।
উদা:- 'ই' , 'উ' ।
(খ) উচ্চমধ্য স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা স্বরধ্বনি এলাকার উচ্চস্বরের অবস্থান থেকে কিছুটা নিচে অবস্থান করে , তাদের উচ্চমধ্য স্বর বলে ।
উদা:- 'এ' , 'ও' ।
(গ) নিম্নমধ্য স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় জিহ্বা স্বরধ্বনি এলাকার নিম্নতম স্থান থেকে কিছুটা উপরে অবস্থান করে , তাদের নিম্নমধ্য স্বর বলে।
উদা:- 'অ্যা' 'অ'।
(ঘ) নিম্নস্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিহ্বা স্বরধ্বনি এলাকার একেবারে নিম্নতম স্থানে অবস্থান করে, তাদের নিম্ন স্তর বলে।
উদা :- 'আ'
(II) ওষ্ঠের আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ:-
ওষ্ঠের আকৃতি অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনিগুলিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয় -
(ক) প্রসারিত/ প্রসৃত স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ দুই কানের দিকে প্রসারিত হয়, তাদের প্রসারিত স্বর বলে।
উদা:- 'ই' , 'এ' , 'অ্যা' ।
(খ) কুঞ্চিত/বর্তুল স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ওষ্ঠ কুঞ্চিত হয়ে গোলাকার রূপ ধারণ করে, সেগুলিকে কুঞ্চিত স্বর বলে ।
উদা:- 'উ' , 'ও' ,'অ'
(গ) মধ্যস্থ স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণে ওষ্ঠ প্রসারিত ও কুঞ্চিত না হয়ে স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করে , তাদের মধ্যস্থ স্বর বলে।
উদা:- 'আ'
(III) মুখবিবরের শূন্যতার পরিমাণ অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ :-
মুখবিবরের শূন্যতার পরিমাণ অনুযায়ী বাংলা স্বরধ্বনি গুলিকে ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়।
(ক) সংবৃত স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় মুখের শূন্যতা থাকে সবচেয়ে কম ,সেগুলিকে বলে সংবৃত স্বর।
উদা:- 'ই' , 'উ'
(খ) অর্ধ-সংবৃত স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় মুখের শূন্যতার পরিমাণ, সংবৃত স্বরের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে ,সেগুলিকে বলে অর্ধ-সংবৃত স্বর।
উদা:- 'এ' , 'ও'
(গ) অর্ধ- বিবৃত স্বর :-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় মুখের শূন্যতার পরিমাণ সর্বাধিক পরিমাণের চেয়ে কিছুটা কম থাকে, সেগুলিকে বলে অর্ধ-বিবৃত স্বর।
উদা:- 'অ্যা' , 'অ'
(ঘ) বিবৃত স্বর:-
যে স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় মুখের শূন্যতার পরিমাণ থাকে সর্বাধিক, তাদের বিবৃত স্বর বলে।
উদা:- 'আ'
0 Comments